টাকা ফেরত পাওয়ার আমল অনেকের কাছেই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। কারণ অনেক সময় আমরা কাউকে টাকা ধার দিই বা কোনো কাজের অগ্রিম টাকা পরিশোধ করি, কিন্তু পরে আর টাকা ফেরত পাই না। তখন দুশ্চিন্তা, কষ্ট এবং মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। ঠিক তখনই টাকা ফেরত পাওয়ার আমল ও দোয়া মানুষকে মানসিক শান্তি দেয় এবং আল্লাহর সাহায্যের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। টাকা ফেরত পাওয়ার আমল মানুষের বহু সমস্যার সমাধান করে থাকে—বিশেষ করে যারা পাওনা ফিরে পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। এই আর্টিকেলে থাকবে কার্যকর আমল, দোয়া, নিয়ম-কানুন ও বাস্তব দিকনির্দেশনা।
টাকা ফেরত পাওয়ার আমল কেন গুরুত্বপূর্ণ
পাওনা টাকা ফেরত না পাওয়া শুধু আর্থিক সমস্যা নয়, বরং পারিবারিক, সামাজিক ও মানসিক সমস্যাও তৈরি করে। ইসলামে কারো টাকা আটকে রাখা বা ফেরত না দেওয়া কঠোরভাবে নিষেধ। তাই দোয়া, আমল ও আল্লাহর উপর ভরসা রেখে চেষ্টা চালানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় আমল ও নিয়মিত দোয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা মানুষের মন পরিবর্তন করে দেন, এবং টাকা ফেরত পাওয়া সহজ হয়ে যায়।
টাকা ফেরত পাওয়ার আমল (সরাসরি কার্যকর আমল)
টাকা ফেরত পাওয়ার আমল করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। এখানে সবচেয়ে সহজ এবং নির্ভরযোগ্য কয়েকটি আমল উল্লেখ করা হলো:
প্রথম আমল: সূরা আল–ফাতিহা পড়া
ফজরের নামাজের পর ৭ বার সূরা আল–ফাতিহা পড়ে দোয়া করুন:
“হে আল্লাহ, যিনি আমার পাওনা আটকে রেখেছে, তার অন্তরে ফেরত দেওয়ার ইচ্ছা সৃষ্টি করে দিন।”
এই আমল অনেক আলেম ও ইসলামিক গবেষকের মতে প্রভাবশালী।
দ্বিতীয় আমল: সূরা ইনশিরাহ (أَلَمْ نَشْرَحْ)
প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৩ বার সূরা ইনশিরাহ পড়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম মনে করে দোয়া করবেন।
বিশ্বাস রেখে পড়লে আল্লাহ তায়ালা সমস্যার সমাধান করে দেন।
তৃতীয় আমল: “ইয়া ওয়াদুদু” জিকির
যে ব্যক্তি আপনার টাকা রেখে দিয়েছেন, তার ব্যাপারে জিকির হিসেবে পড়ুন:
“ইয়া ওয়াদুদু” – ১০০০ বার
এরপর দোয়া করবেন টাকা সহজেই ফেরত পাওয়ার জন্য।
চতুর্থ আমল: দোয়া নাসির
এটি খুব পরিচিত আমল:
“রাব্বি আনসুরনি ফিমা কার্তু”
১০১ বার পড়ে দোয়া করলে পাওনা ফেরতের পথ সহজ হয়।
এগুলো নিয়মিত করা হলে খুব দ্রুত ফল পাওয়া যায়।
টাকা ফেরত পাওয়ার দোয়া (সহজ ও প্রমাণিত)
পাওনা ফেরত আদায়ের জন্য কিছু দোয়া রয়েছে যেগুলো হাদিস ও আলেমদের ব্যাখ্যা থেকে নেওয়া। এখানে সহজ ও নিরাপদ দোয়া তুলে ধরা হলো:
দোয়া ১
“আল্লাহুম্মা আত্তিনি হাক্কি মিন ফাদলিকা।”
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার পক্ষ থেকে আমার হক আমাকে ফিরিয়ে দিন।
দোয়া ২
“হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু।”
এই দোয়া বিশেষভাবে দুশ্চিন্তা দূর করে এবং সমস্যা সমাধানের পথ তৈরি করে।
দোয়া ৩
যদি কেউ টাকা দিতে না চায় বা ফাঁকি দেয়, তবে
“ইয়া কাহ্হারু, ইয়া জাব্বার”
এ দুই নাম প্রতিদিন ৩০০ বার করে পড়ুন।
এতে অন্যায়কারী ব্যক্তি নরম হয়ে যায়।
পাওনা ফেরত পেতে যে আদব মানা জরুরি
অনেক সময় আমল করার পাশাপাশি কিছু আচরণগত বিষয় মানলেও টাকা ফেরত পাওয়া সহজ হয়।
ধৈর্য ধরে চেষ্টা করা
অতিরিক্ত রাগ করা বা গালমন্দ করলে উল্টো সমস্যা বাড়তে পারে। ইসলামে ধৈর্য খুব গুরুত্বপূর্ণ।
পাওনা ব্যক্তি কে বিনয়ের সঙ্গে স্মরণ করানো
অতিরিক্ত চাপ নয়, বরং নম্রভাবে কথা বলা বেশি কার্যকর।
নিজের আচরণে সততা রাখা
সততা ও নিয়তে বিশুদ্ধতা থাকলে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য দ্রুত আসে।
দোয়ার সাথে চেষ্টা অব্যাহত রাখা
শুধু আমল করলেই হবে না—চেষ্টা করতে হবে, যোগাযোগ রাখতে হবে।
যাদের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, তাদের সাধারণ প্রশ্ন
পাওনা ব্যক্তি টাকা দিতে না চাইলে কি করতে হবে?
আমল ও দোয়া করবেন, পাশাপাশি প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা বিবেচনা করতে পারেন।
ইসলামে নিজের হক রক্ষা করা বৈধ।
গুনাহ ছাড়া কীভাবে টাকা দাবি করা যায়?
গালমন্দ, অপমান, বিরোধ—এগুলো এড়িয়ে ভদ্রভাবে কথা বলা ইসলামীভাবে সুন্নতসম্মত।
আমল করার সময় নির্দিষ্ট সময় কি বাধ্যতামূলক?
হ্যাঁ, বেশিরভাগ আমল ফজর বা এশার পরে করা উত্তম।
টাকা ফেরত পাওয়ার আমল কতদিন করতে হবে?
যতদিন না টাকা ফেরত পাওয়ার পথ খুলে যাচ্ছে, ততদিন নিয়মিত করবেন।
যেসব ভুল করলে ফল পাওয়া কঠিন হয়ে যায়
অনেকেই আমল করেন, কিন্তু কিছু সাধারণ ভুলের কারণে ফল পান না।
ভুল ১: সন্দেহ নিয়ে আমল করা
দোয়া বা আমল আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা নিয়ে করতে হয়।
ভুল ২: কারো ক্ষতি করার চিন্তা করা
কারো ক্ষতি চাইলে আমল কবুল হয় না।
ভুল ৩: নিজের আচরণে অন্যায় থাকা
নিজে যদি কারো হক নষ্ট করেন, তাহলে নিজের হক পাওয়া কঠিন হয়।
ভুল ৪: নিয়মিত না থাকা
হঠাৎ ২ দিন করে পরে ছেড়ে দিলে ফল পাওয়া ধীর হয়ে যায়।
উপসংহার: টাকা ফেরত পাওয়ার আমল কি সত্যিই কাজ করে?
টাকা ফেরত পাওয়ার আমল বাস্তবেই মানুষের উপকার করে থাকে—যদি তা সঠিক নিয়মে, ঈমান ও ভরসা সহকারে করা হয়। আমল, দোয়া এবং শুদ্ধ নিয়ত আল্লাহ তায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য হলে, তিনি মানুষের হৃদয় নরম করে দেন, বাধা দূর করে দেন এবং পাওনা ফেরতের পথ খুলে দেন। তাই সমস্যায় থাকলে দোয়া, আমল ও ধৈর্য—এই তিনটিই একসাথে অনুসরণ করা জরুরি।

